Allah | আল্লাহকে স্মরণ করবেন কেন?

আল্লাহর স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তাআলা কোরআনুল কারিমের অনেক আয়াতে তাকে স্মরণ করার কথা বলেছেন। কিন্তু কেন তাকে স্মরণ করতে হবে? এ সম্পর্কে কোরআনুল কারিমের দিকনির্দেশনাই বা কী? Allah

হ্যাঁ, আল্লাহ তাআলা মানুষকে সঠিক পথের ওপর চলতেই তাকে স্মরণ করার কথা বলেছেন। জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেদের বাঁচানোর জন্যই তাকে স্মরণ করতে বলেছেন।

পরকালের মুক্তির জন্য তাকে স্মরণ করতে বলেছেন। আল্লাহ তাআলা নিজেই কোরআনুল কারিমে বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেছেন-

আরো পড়ুন …..

Allah
allah-99-name

আপনার দাড়ি আছে তো | দাড়ি রাখার উপকারিতা

তাহাজ্জুদ নামাজ কিভাবে আদায় করবেন

নামাজের দোয়া ও সূরা (বাংলা অনুবাদ,অর্থসহ আরবি)

ALLAH 99 NAME | ENGLISH , BANGLA , ARABIC

Download Official android apps

رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هٰذَا بَاطِلًا ۚ سُبۡحٰنَکَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

‘হে আমাদের প্রভু! আপনি (সৃষ্টি জগতের) এসব নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। আপনি পবিত্র। আপনি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।’

আল্লাহকে স্মরণ করার কারণ Allah

১. وَ لَذِکۡرُ اللّٰهِ اَکۡبَرُ

‘আর আল্লাহর ( Allah ) স্মরণই সর্বশ্রেষ্ঠ।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ৪৫)

এ আয়াতেরর কয়েকটি অর্থ হতে পারে। এক. আল্লাহকে স্মরণ করা সবচেয়ে বড় ইবাদত। আর নামাজ বড় ইবাদত হওয়ার কারণও আল্লাহর জিকির। সুতরাং যে নামাজে বেশিবেশি জিকির হয় সে নামাজ সবচেয়ে উত্তম। (ইবনে কাসির)

দুই. আল্লাহকে স্মরণ করা সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ। মানুষের জন্য আল্লাহকে স্মরণ করার চেয়ে বড় কোনোকাজ আর নেই। (তাবারি)

তিন. দুনিয়ায় অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখতে ‘আল্লাহর স্মরণ’ অনেক কার্যকরী। Allah যা নামাজ থেকে বেশি প্রভাব রাখে।

কারণ, মানুষ যতক্ষণ নামাজে থাকে, ততক্ষণ মন্দ কর্ম থেকে বিরত থাকে।

কিন্তু নামাজের পর এ প্রভাব কমে যায়। পক্ষান্তরে সব সময় আল্লাহর জিকির মানুষকে মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। (আহসানুল বয়ান)

এ কারণেই আয়াতে আল্লাহর স্মরণকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদের লক্ষ্য করে বলেছেন-

یٰۤاَیُّهَاالَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اذۡکُرُوا اللّٰهَ ذِکۡرًا کَثِیۡرًا

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৪১) Allah

যিকিরের কিছু মূল্যবান ও ফজিলতময় শব্দ ও বাক্যঃ

(سُبْحَانَ الله) সুবহানাল্লাহ।


(اَلْحَمْدُ للهِ) আলহামদুলিল্লাহ।


(لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ) লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ।


(اَللهُ اَكْبَر) আল্লাহু আকবার।


(سُبْحَانَ اللهِ وَ بِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْم) সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম। Allah

২. আল্লাহর স্মরণকারী নারী-পুরুষের জন্য ক্ষমা ও প্রতিদান

 وَ الذّٰکِرِیۡنَ اللّٰهَ کَثِیۡرًا وَّ الذّٰکِرٰتِ ۙ اَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمۡ مَّغۡفِرَۃً وَّ اَجۡرًا عَظِیۡمًا

‘আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী নারী; এদের জন্য রয়েছে আল্লাহ ক্ষমা এবং তিনি মহাপ্রতিদানও রেখেছেন।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৩৫)

প্রথমত : আল্লাহকে স্মরণ বা তার জিকির করা সব ইবাদতের প্রকৃত রূহ। হজরত মুয়াব ইবনে জাবাল রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলো যে,

মুজাহিদগণের মধ্যে সর্বাধিক প্রতিদান ও সাওয়াবের অধিকারী কোন ব্যক্তি?

তিনি বললেন, ‘যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহকে স্মরণ করবে।

এরপর জিজ্ঞাসা করলো যে. রোজাদারদের মধ্যে সর্বোচ্চ সাওয়াবের অধিকারী কে হবে?

তিনি বললেন, ‘যে আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি স্মরণ করবে।

এভাবে নামাজ, জাকাত, হজ ও সাদকা প্রভৃতি সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করলো। প্রতিবারই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একই উত্তর দিলেন- যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি আল্লাহর জিকির করবে; সে-ই সর্বোচ্চ প্রতিদান পাবে।’ (ইবনে কাসির, মারেফুল কোরআন)

দ্বিতীয়ত : যাবতীয় ইবাদতের মধ্যে এটাই (আল্লাহর স্মরণ বা জিকির) সবচেয়ে সহজ। আল্লাহকে স্মরণ (জিকির) করতে ইসলামি শরিয়ত কোনো শর্তারোপ করেনি।

অজুসহ কিংবা বিনা অজুতে ওঠা-বসা চলাফেরায় সব সময় আল্লাহর জিকির বা স্মরণে কোনো বাধা নেই। আর আল্লাহর স্মরণ বা জিকিরের জন্য অতিরিক্ত কোনো পরিশ্রম বা কোনো অবসর সময়েরও প্রয়োজন নেই।

অথচ এই জিকির বা আল্লাহর স্মরণের লাভ বা ফলশ্রুতি এত বেশি যে, এর মাধ্যমে দুনিয়ার স্বাভাবিক কাজগুলো ইবাদতে পরিণত হয়। আল্লাহর স্মরণ বা জিকিরে খাবার খাওয়া, বাড়ি থেকে বের হওয়া, সফরে যাওয়া,

বাড়িতে ফিরে আসা, ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করা, চাকরিতে যাওয়াসহ সবকিছুতে আল্লাহর স্মরণে রয়েছে মানুষের জন্য ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান। Allah

এ জন্যই মহান আল্লাহকে স্মরণ করা জরুরি। আর আল্লাহ তাআলা তাকে স্মরণ করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। (মারেফুল কোরআন)

৩. আল্লাহর স্মরণেই জাহান্নাম থেকে মুক্তি

 اِنَّ فِیۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ وَ اخۡتِلَافِ الَّیۡلِ وَ النَّهَارِ لَاٰیٰتٍ لِّاُولِی الۡاَلۡبَابِ – الَّذِیۡنَ یَذۡکُرُوۡنَ اللّٰهَ قِیٰمًا وَّ قُعُوۡدًا وَّ عَلٰی جُنُوۡبِهِمۡ وَ یَتَفَکَّرُوۡنَ فِیۡ خَلۡقِ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ

‘নিশ্চয়ই আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে এবং রাত ও দিনের পরিবর্তনে জ্ঞানী লোকেদের জন্য রয়েছে নিদর্শন। যারা দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্বন্ধে চিন্তা করে এবং (বলে)-

رَبَّنَا مَا خَلَقۡتَ هٰذَا بَاطِلًا ۚ سُبۡحٰنَکَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ : ‘রাব্বানা মা খালক্বতা হাজা বাত্বিলাং সুবহানাকা ফাক্বিনা আজাবান্নার।’

অর্থ : ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি এসব নিরর্থক সৃষ্টি করনি। তুমি পবিত্র। তুমি আমাদেরকে আগুনের শাস্তি থেকে রক্ষা কর।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৯০-১৯১) Allah

এ আয়াতে আল্লাহর স্মরণ বা জিকিরকারীদের অবস্থা ও মর্যাদার বিষয়টি হাদিসের বর্ণনায় এভাবে ওঠে এসেছে-

হজরত উবাইদ ইবনে উমাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললাম, রাসুলের সবচেয়ে আশ্চর্য কি কাজ আপনি দেখেছেন; তা আমাদেরকে জানান। হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন-

‘এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, হে আয়েশা! আমাকে আমার রবের ইবাদাত করতে দাও। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি আপনার পাশে থাকতে ভালবাসি এবং

যা আপনাকে খুশি করে তা করতে ভালবাসি। তারপর আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অজু করলেন এবং নামাজ আদায়ে (আল্লাহর স্মরণে) নিবিষ্ট হলেন আর কাঁদতে থাকলেন।

আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কাঁদছেন! অথচ আল্লাহ আপনার আগের-পরের সব গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন?

উত্তরে তিনি বললেন, ‘আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হব না? এ রাতে আমার উপর একটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে, যে ব্যক্তি তা তেলাওয়াত করলো কিন্তু (আল্লাহর স্মরণে তাঁর সৃষ্টি নিয়ে) চিন্তা-গবেষণা করলো না,

তার ধ্বংস অনিবার্য। তারপর তিনি এ আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন।’ (ইবনে হিব্বান)

আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ রাখার নির্দেশ

এভাবে মহান আল্লাহ তাআলা তাঁকে স্মরণ করার বা তাঁর জিকির করার গুরুত্ব একাধিক আয়াতে তুলে ধরেছেন। যাতে কেউ দুনিয়ার কোনো স্বার্থে বা বেখেয়ালে তার জিকির বা স্মরণ থেকে বিরত না থাকে। সে বিষয়ে সতর্ক করে তাঁর জিকির করার নির্দেশগুলো একাধিক আয়াতে এভাবে তুলে ধরেছেন- Allah

৪. یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تُلۡهِکُمۡ اَمۡوَالُکُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ ۚ وَ مَنۡ یَّفۡعَلۡ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ هُمُ الۡخٰسِرُوۡنَ

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের ধন-সম্পত্তি ও সন্তান- সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণ হতে উদাসিন না করে, যারা উদাসীন হবে, তারাই তো ক্ষতিগ্রস্ত।’ (সুরা মুনাফিকুন : আয়াত ৯)

৫. رِجَالٌ ۙ لَّا تُلۡهِیۡهِمۡ تِجَارَۃٌ وَّ لَا بَیۡعٌ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ اِقَامِ الصَّلٰوۃِ وَ اِیۡتَآءِ الزَّکٰوۃِ ۪ۙ یَخَافُوۡنَ یَوۡمًا تَتَقَلَّبُ فِیۡهِ الۡقُلُوۡبُ وَ الۡاَبۡصَارُ

‘এমন সব (পুরুষ) লোকও রয়েছে যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহর স্মরণ হতে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠায় ও জাকাত দেওয়া থেকে বিরত রাখে না; তারা ভয় করে সেদিনকে, যেদিন তাদের অন্তর ও দৃষ্টি ভীতি-বিহব্বল হয়ে পড়বে।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩৭)

৬. وَ اذۡکُرۡ رَّبَّکَ فِیۡ نَفۡسِکَ تَضَرُّعًا وَّ خِیۡفَۃً وَّ دُوۡنَ الۡجَهۡرِ مِنَ الۡقَوۡلِ بِالۡغُدُوِّ وَ الۡاٰصَالِ وَ لَا تَکُنۡ مِّنَ الۡغٰفِلِیۡنَ

‘আর তুমি নিজ মনে আপন রবকে স্মরণ কর সকাল-সন্ধ্যায় অনুনয়-বিনয় ও ভীতি সহকারে এবং অনুচ্চ স্বরে। আর তুমি উদাসীনদের দলভুক্ত হয়ো না।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ২০৫)

৭. یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا لَقِیۡتُمۡ فِئَۃً فَاثۡبُتُوۡا وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

‘হে বিশ্বাসিগণ! তোমরা যখন কোনো দলের সম্মুখীন হবে, তখন অবিচল থাক এবং আল্লাহকে বেশি স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা আনফাল : আয়াত ৪৫)

৮. فَاِذَا قَضَیۡتُمۡ مَّنَاسِکَکُمۡ فَاذۡکُرُوا اللّٰهَ کَذِکۡرِکُمۡ اٰبَآءَکُمۡ اَوۡ اَشَدَّ ذِکۡرًا ؕ فَمِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّقُوۡلُ رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا وَ مَا لَهٗ فِی الۡاٰخِرَۃِ مِنۡ خَلَاقٍ

‘এর যখন তোমরা (হজের) যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে নেবে, তখন (মিনায়) আল্লাহকে এমনভাবে স্মরণ করবে, যেমন (জাহেলী যুগে) তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষগণকে স্মরণ করতে, অথবা তার চেয়েও বেশি গভীরভাবে। Allah

এমন কিছু লোক আছে যারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে পৃথিবীতে (সাওয়াব) দান কর।’ বস্তুতঃ তাদের জন্য পরকালে কোনো অংশ নেই।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২০০)

৯. فَاِذَا قُضِیَتِ الصَّلٰوۃُ فَانۡتَشِرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ ابۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِ اللّٰهِ وَ اذۡکُرُوا اللّٰهَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ

‘এরপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) অনুসন্ধান কর ও আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ১০)

১০. فَلَوۡ لَاۤ اَنَّهٗ کَانَ مِنَ الۡمُسَبِّحِیۡنَ – لَلَبِثَ فِیۡ بَطۡنِهٖۤ اِلٰی یَوۡمِ یُبۡعَثُوۡنَ

সে যদি আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা (জিকির/স্মরণ) না করতো; তাহলে সে (হজরত ইউনুছ আলাইহিস সালাম) পুনরুত্থান দিবস (কেয়ামত) পর্যন্ত মাছের পেটে থেকে যেত।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১৪৩-১৪৪)

১১. اِنَّ لَکَ فِی النَّهَارِ سَبۡحًا طَوِیۡلًا – وَ اذۡکُرِ اسۡمَ رَبِّکَ وَ تَبَتَّلۡ اِلَیۡهِ تَبۡتِیۡلًا

‘দিবাভাগে তোমার জন্য রয়েছে দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা। সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর এবং একনিষ্ঠভাবে তাতে (আল্লাহর স্মরণ/জিকিরে) মগ্ন হও।’ (সুরা মযযাম্মিল : আয়াত ৭-৮)

৯. وَ اذۡکُرِ اسۡمَ رَبِّکَ بُکۡرَۃً وَّ اَصِیۡلًا –  وَ مِنَ الَّیۡلِ فَاسۡجُدۡ لَهٗ وَ سَبِّحۡهُ لَیۡلًا طَوِیۡلًا

‘আর তোমার প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর সকাল ও সন্ধ্যায়। এবং রাতের কিছু সময়  তাঁকে সিজদাহ (নামাজ আদায়) কর এবং রাতের দীর্ঘ সময় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা (জিকির) ঘোষণা কর।’ (সুরা দাহর : আয়াত ২৫-২৬) Allah

মনে রাখতে হবে

মহান আল্লাহ মানুষকে দুনিয়া ও পরকালের কল্যানে তাকে বেশি বেশি স্মরণ করার দিকনির্দেশনা দিয়েছেন; তা হোক জিকির, কোরআন তেলাওয়াত, হজ, রোজা, জাকাত কিংবা অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে। চাই তা হোক দিনে কিংবা রাতে।

১২. শুধু তা-ই নয়

জিকির থেকে বিরত না থাকতেও কঠোর সতর্কতা জারি করেছেন এভাবে-

اَفَمَنۡ شَرَحَ اللّٰهُ صَدۡرَهٗ لِلۡاِسۡلَامِ فَهُوَ عَلٰی نُوۡرٍ مِّنۡ رَّبِّهٖ ؕ فَوَیۡلٌ لِّلۡقٰسِیَۃِ قُلُوۡبُهُمۡ مِّنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ ؕ اُولٰٓئِکَ فِیۡ ضَلٰلٍ مُّبِیۡنٍ

‘আল্লাহ ইসলামের জন্য যার বুক উন্মুক্ত করে দিয়েছেন, ফলে সে তার প্রভু থেকে (আগত) আলোর মধ্যে আছে। সে কি তার সমান- যে এরূপ নয়? সুতরাং দুর্ভোগ তাদের জন্য, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণে কঠিন, ওরাই স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে।’ (সুরা যুমার : আয়াত ২২)

তাই কোনো মুমিন মুসলমানের অন্তরে এ প্রশ্ন আসার সুযোগ নেই যে, কেন আল্লাহর জিকির করবো? জিকিরে ফায়েদা বা উপকারিতাই বা কী?

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে মহান আল্লাহর জিকিরে নিজেকে নিয়োজিত রাখা। কোরআনের নির্দেশনা মোতাবেক নামাজ, রোজা,

হজ, জাকাত, দান-সাদকাসহ সব ধরনের ইবাদতের মাধ্যমে তাকে বেশি বেশি স্মরণ করা। দুনিয়ার সব পাপ থেকে ক্ষমা পেয়ে বিশেষ প্রতিদান পাওয়ার মাধ্যমে পরকালে জাহান্নামের কঠিন পরিস্থিতি থেকে মুক্ত থাকা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার প্রতিটি কাজে সর্ববস্থায় আল্লাহর জিকির করার তাওফিক দান করুন। কোরআনের দিকনির্দেশনা মোতাবেক জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

যিকিরের কিছু ফায়দাঃ

বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. শুধু যিকিরের ফযিলত সম্পর্কে স্বতন্ত্র একটি কিতাবই লিখেছেন। তাঁর কিতাবের নাম ‘আলওয়াবিলুছ ছাইয়িব’। Allah

সে কিতাবে তিনি যিকিরের ফায়দা ও ফযিলত সম্পর্কে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। ঐ কিতাবে তিনি যিকিরের একশরও বেশি ফায়দা উল্লেখ করেছেন। কিছু ফায়দা এখানে তুলে ধরা হল।

১. যিকির শয়তানকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং তার শক্তি নষ্ট করে দেয়।

২. আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ হয়।

৩. দুশ্চিন্তা দূর করে।

৪. প্রশান্তি দান করে।

৫. অন্তর ও শরীরে শক্তি যোগায়।

৬. চেহারা ও অন্তরকে নূরানী করে।

৭. রিযিকে বরকত আনে। Allah

৮. যিকিরকারীর মাঝে মাধুর্য ও গাম্ভীর্য সৃষ্টি করে।

৯. আল্লাহর মহববত পয়দা করে। আর মহববতই হচ্ছে ইসলামের রূহ দীনের কেন্দ্র এবং মুক্তি ও সৌভাগ্যের উপায়। যে ব্যক্তি আল্লাহর মহববত পেতে চায় সে যেন বেশী বেশী যিকির করে।

১০. যিকির মোরাকাবার পক্ষে সহায়ক, যা যিকিরকারীকে এহসানের মাকামে পৌঁছে দেয়। আর এই মাকামে পৌঁছলে বান্দার এমন ইবাদত নছীব হয় যেন সে আল্লাহকে দেখছে।

১১. যিকির মানুষকে আল্লাহমুখী করে। ঘরে বাইরে তার হালত এমন হয় যে, সকল বিষয়ে আল্লাহ তাআলাকে্ই সাহায্যকারী মনে করে এবং যাবতীয় বিপদ আপদে তাঁরই আশ্রয় গ্রহণ করে।

১২. আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হয়। যিকির যত বেশী হবে নৈকট্যও তত বৃদ্ধি পাবে। আর যিকির থেকে যতই গাফলতি করা হবে ততই আল্লাহ থেকে দূরে সরে যাবে।

১৩. আল্লাহর মারেফাতের দরজা খুলে যায়।

১৪. অন্তরে আল্লাহর ভয় ও বড়ত্ব সৃষ্টি হয় এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহ তাকে দেখছেন, এই অনুভূতি সৃষ্টি হয়।

১৫. স্বয়ং আল্লাহ যিকিরকারীকে স্মরণ করেন।

১৬. দিলকে জিন্দা করে। Allah

১৭. যিকির হল দিল ও রূহের গিযা। খাদ্যের অভাবে শরীর যেমন দুর্বল হয়ে পড়ে, তেমনি যিকিরের অভাবে দিলও মৃতপ্রায় হয়ে যায়।

১৮. দিলের মরিচা দূর করে। দিলের মরিচা হল খাহেশাত ও গাফলত। যিকির তওবা, ইস্তেগফারের মাধ্যমে তা দূর হয়।

১৯. গুনাহ মাফ হয়। কারণ যিকির হল সর্বোত্তম নেক আমলসমূহের অন্যতম। আর নেক আমলের মাধ্যমে গুনাহ মাফ হয়ে থাকে।

২০. আল্লাহর সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি করে এবং সম্পর্কহীনতা দূর করে। গাফিল আল্লাহ থেকে দূরে থাকে, শুধু যিকিরের মাধ্যমেই এই দূরত্ব দূর হয়।

২১. বান্দা তার প্রতিপালকের যে সমস্ত তাসবীহ আদায় করে যে কারণে কঠিন মুহূর্তে আল্লাহ তাকে স্মরণ করবেন।

২২. যে ব্যক্তি সুখ ও সচ্ছলতায় আল্লাহকে স্মরণ করে, দু:খ ও মুছিবতে আল্লাহ তাকে স্মরণ করেন। Allah

২৩. যিকির আল্লাহর আযাব থেকে নাযাত দান করে।

২৪. যিকিরের কারণে ছাকিনা ও রহমত নাযিল হয়। ফেরেশতারা চতুর্দিক থেকে যিকিরকারীকে ঘিরে রাখে।

২৫. যিকিরের বরকতে গীবত, চোগলখুরী, মিথ্যাকথা, বেহুদা কথা ইত্যাদি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, যিকিরে অভ্যস্ত ব্যক্তি এই সব কাজ কর্মে লিপ্ত হয় না। পক্ষান্তরে যিকিরের বিষয়ে উদাসীন লোকেরা এই সব কর্মে লিপ্ত থাকে।

২৬. যিকিরের মজলিস ফেরেশতাদের মজলিস। আর গাফলতি ও বেহুদা কথাবার্তার মজলিস হল শয়তানের মজলিস।

২৭. যিকিরের কারণে যেমন যিকিরকারী উপকৃত হয় তেমনি আশেপাশের লোকেরাও উপকৃত হয়। আর বেহুদা কথাবার্তায় লিপ্ত ব্যক্তি নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তার আশেপাশের লোকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

২৮. যিকিরকারী কেয়ামতের দিন আফসোস করবে না। হাদীসে আছে, যে মজলিসে আল্লাহর যিকির হয় না। কেয়ামতের দিন তা আফসোস ও ক্ষতির কারণ হবে।

২৯. নির্জনে আল্লাহর স্মরণে যার চোখ থেকে অশ্রু ঝরে সে কেয়ামতের দিন আরশের শীতল ছায়ায় স্থান পাবে। যখন মানুষ প্রচন্ড গরমে ছটফট করতে থাকবে।

৩০. দোয়াকারী দোয়ার মাধ্যমে যা কিছু পায় যিকিরকারী যিকিরের কারণে তার চেয়ে অনেক বেশি পায়।

৩১. যিকির যদিও সহজ ইবাদত কিন্তু তা সমস্ত ইবাদত থেকে উওম। সহজ এই জন্য যে, শুধু যবান নড়াচড়া করা সমস্ত অঙ্গ-পতঙ্গ নড়াচড়া করা থেকে সহজ।

৩২. আল্লাহর যিকির জান্নাতের চারাগাছ।

৩৩. যিকিরের মাধ্যমে যত পুরুস্কার ও ছওয়াব পাওয়া যায়। অন্য কোন আমলের দ্বারা তা পাওয়া যায় না।

৩৪. যে সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ করে আল্লাহ তাকে রহমতের সাথে স্মরণ করেন। আর যে আল্লাহকে ভুলে যায় আল্লাহও তাকে ভুলে যান।

আল্লাহ যাকে ভুলে যান দুনিয়া ও আখেরাতে তার চেয়ে দুর্ভাগা আর কে হতে পারে? সুতরাং যিকির হল সৌভাগ্য লাভ করার ও দুর্ভাগ্য থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়।

৩৫. যিকির মানুষকে সর্বাবস্থায় আল্লাহর রেযামন্দির পথে ধাবমান রাখে। বিছানায়, বিশ্রামে, সুস্থতায়, অসুস্থতায়, দুনিয়ার কাজকর্মে সর্বাবস্থায় যিকিরের মাধ্যমে উন্নতির পথে চলমান থাকা সম্ভব। Allah

যিকির ছাড়া আর কোন আমল নেই, যা সর্বাবস্থায় জারি রাখা যায়। ফলে যিকিরকারী বিছানায়, বিশ্রামরত অবস্থায় ও ঐ ব্যক্তির চেয়ে অগ্রগামী হয়ে যায়, যে গাফেল অবস্থায় রাত্রী জাগরণ করে।

৩৬. যিকির দুনিয়ার জীবনে নূর ও আলো, কবরের জগতে নূর ও আলো এবং আখেরাতে ও পুলসিরাতে নূর ও আলো। অন্য কিছুই বান্দাকে এত নূর ও নূরানিয়াত দান করে না।

৩৭. আল্লাহর স্মরণ ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়।এটি আল্লাহওয়ালাদের তরীকা এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের উপায়।অতএব যিকিরের দরজা যার জন্য উন্মুক্ত হয়েছে তার জন্য আল্লাহর নৈকট্যের দরজা উন্মুক্ত হয়েছে। অতএব সে যেন যাহেরী ও বাতেনী পবিত্রতা অর্জন করে এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের সৌভাগ্য অর্জন করে। যে আল্লাহকে পেল সে সব পেল আর যে আল্লাহকে পেল না সে কিছুই পেল না।

৩৮. অন্তরের একটি চাহিদা আছে, যা যিকির ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে পূরণ হয় না। যিকির যখন অন্তরে বদ্ধমূল হয় এবং অন্তরই হয় প্রকৃত যিকিরকারী।

আর যবান হয় তার অনুসারী,তখন তা শুধু অন্তরের চাহিদাকেই পূরণ করে না বরং যিকিরকারীকে সম্পদ ছাড়াই ধনী করে দেয়। আত্মীয়-স্বজন ও জনবল ছাড়াই শক্তিশালী বানিয়ে দেয় এবং Allah

ক্ষমতা ছাড়াই প্রভাবশালী বানিয়ে দেয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি যিকির থেকে গাফেল সে ধন সম্পদ, আত্মীয়-স্বজন ও রাজত্ব থাকা সত্ত্বেও লাঞ্ছিত, অপমানিত ও শক্তিহীন হয়ে যায়।

৩৯. যিকির বিক্ষিপ্তকে একত্র করে এবং একত্রকে বিক্ষিপ্ত করে। দূরবর্তীকে নিকটবর্তী করে এবং নিকটবর্তীকে দূরবর্তী করে।বিক্ষিপ্তকে একত্র করার অর্থ হল, মানুষের ইচ্ছা, সংকল্প ও একগ্রতা ফিরিয়ে দেয়

এবং তা শক্তিশালী করে। আর একত্রকে বিক্ষিপ্ত করার অর্থ মানুষের অন্তরের দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী দূর করে দেয়। যিকিরের মাধ্যমে পেরেশানি দূর হয় এবং অন্তরে প্রশান্তি আসে।

তেমনি কৃতকর্মের ফলে যে পাপরাশি একত্র হয়েছে যিকির তা দূর করে এবং আমলনামাকে পাপমুক্ত করে। তেমনি শয়তানের যে বাহিনী মানুষকে ঘেরাও

করে যিকির তাকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। মানুষ যত আল্লাহর পথে আগুয়ান হয় এবং আল্লাহর সাথে সম্পর্কে গড়তে সচেষ্ট হয়,

ততই শয়তান তার বাহিনীকে মানুষের প্রতি ধাবিত করে। যিকির ছাড়া এই বাহিনীকে পরাস্ত করার আর কোনো উপায় নেই।

৪০. যিকির মানুষের অন্তরকে নিদ্রা থেকে জাগ্রত করে। অন্তর যখন ঘুমন্ত থাকে তখন সে লাভ ও পুঁজি দুটো থেকেই বঞ্চিত থাকে। এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আর যখন সে জাগ্রত হয় এবং কী হারিয়েছে তা বুঝতে পারে তখন ক্ষতিপূরণের জন্য কোমর বাঁধে। গাফলত ও উদাসীনতার গভীর নিদ্রা থেকে যিকিরই মানুষকে জাগ্রত করতে পারে।

৪১. যিকির একটি বৃক্ষ তাতে মারেফাতের ফল ধরে। আল্লাহর মারিফাত ও মহববতই হচ্ছে আল্লাহ প্রেমীদের পরম লক্ষ। সুতরাং যিকির এই লক্ষ্য পূরণের প্রধান অবলম্বন। যিকির বৃক্ষ যত বড় হবে তাতে তত বেশি ফল ধরবে।

৪২. যিকির প্রথমে মানুষকে জাগ্রত করে তারপর তাকে তাওহীদ পযন্ত পৌঁছে দেয়।যা সকল মাকাম ও মারিফাতের মূল।

৪৩. যে আল্লাহর যিকির করে আল্লাহ তার সঙ্গে থাকেন। অর্থাৎ তাকে ভালবাসেন এবং তার সাহায্য করেন।

৪৪. যিকির গোলাম আযাদ করা, আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা ও মুজাহিদকে সওয়ারী দ্বারা সহযোগিতা করার সমতুল্য।

৪৫. যিকির হচ্ছে শোকর গোযারির প্রধান উপায়। যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকির করে না প্রকৃতপক্ষে সে তার শোকর আদায় করেনা। Allah

৪৬. আল্লাহর নিকট ঐ মুত্তাকি বান্দা বেশি সম্মানিত যার যবান আল্লাহর যিকিরে তরতাজা থাকে। যে আল্লাহর ভয়ে তার আদেশ নিষেধ মেনে চলেছে এবং সর্বদা আল্লাহর যিকির করেছে ।

তাকওয়া ও পরহেযগারের কারণে আল্লাহ তাকে জান্নাতে দাখিল করবেন। এবং জাহান্নাম থেকে নাযাত দিবেন । এটা হল তার কর্মের প্রতিদান।

আর যিকিরের কারণে সে লাভ করবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য। এটা হল তার বিশেষ মর্যাদা।

৪৭. মানুষের অন্তরের কাঠিন্য যিকির ছাড়া অন্য কিছুর দ্বারা দূর হয় না। তাই বান্দার কর্তব্য দিলের কাঠিন্যকে আল্লাহর যিকিরের মাধ্যমে দূর করা।

৪৮. যিকির হল দিলের যাবতীয় রোগের চিকিৎসা। যে দিল আল্লাহর স্মরণ থেকে উদাসীন তা রোগাক্রান্ত। তার উপশমের উপায় হল আল্লাহর যিকির।

৪৯. যিকির হল আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়ার প্রধান উপায়। আর যিকির হতে গাফেল থাকাই আল্লাহর অসন্তুষ্টি ও নারাজির প্রধান কারণ।

সুতরাং বান্দা যখন আল্লাহর যিকির করতে থাকে তখন সে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হয়ে যায়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি উদাসীন থাকে সে ধীরে ধীরে আল্লাহ থেকে দূরে সরে যায় এবং আল্লাহ তাকে অপছন্দ করতে থাকেন।

৫০. যিকিরের মতো আল্লাহর নেয়ামত আকর্ষণকারী এবং আল্লাহর আযাব দূরকারী আর কোনো জিনিস নেই।

৫১. যিকিরকারীর উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয় এবং ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করে। আর এটাই হল পূর্ণ সফলতা ও কামিয়াবি।

৫২. যে ব্যক্তি দুনিয়াতে থেকেই জান্নাতের বাগানে বিচরণ করতে চায় সে যেন যিকিরের মজলিসে শামিল হয়। কারণ এই মজলিস হল জান্নাতের বাগান।

৫৩. যিকিরের মজলিস হল ফেরেশতাদের মজলিস। কারণ একমাত্র যিকিরের মজলিসেই ফেরেশতারা শামিল হয়ে থাকেন।

৫৪. আল্লাহ তাআলা যিকিরকারীদের নিয়ে ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করেন।

৫৫. যে ব্যক্তি যিকিরে অভ্যস্ত সে হাসতে হাসতে জান্নাতে যাবে।

৫৬. যাবতীয় আমলের মূল উদ্দেশ্য হল আল্লাহর যিকির ও স্মরণ।

৫৭. সমস্ত আমলের মধ্যে সেই আমল সর্বোত্তম, যাতে বেশি বেশি যিকির করা হয়। সুতরাং সর্বোত্তম রোযাদার ঐ ব্যক্তি, যে রোযার হালতে বেশি বেশি যিকির করে।

সর্বোওম হাজী ঐ ব্যক্তি, যে হজ্ব আদায়কালে বেশি বেশি যিকির করে। তেমনি সর্বোত্তম মুজাহিদ ঐ ব্যক্তি, যে জিহাদের হালতে বেশি বেশি আল্লাহকে স্বরণ করে। অন্যান্য আমলের অবস্থাও হবে একই রকম। Allah

৫৮. আল্লাহর যিকির সকল নফল ইবাদতের স্থলাভিষিক্ত, তা দৈহিক হোক বা আর্থিক।

৫৯. যিকিরের মাধ্যমে অন্যান্য ইবাদত সহজ হয়ে যায়। কারণ যে বেশি বেশি যিকির করে সে আল্লাহর ইবাদতে লয্যত অনুভব করে ফলে তার ক্লান্তি ও অবসাদ থাকে না।

পক্ষান্তরে যে আল্লাহর যিকির থেকে গাফিল থাকে সে কোনো ইবাদতে লয্যত পায় না। ফলে ইবাদত তার জন্য কষ্ট ও ক্লান্তির বিষয়ে পরিণত হয়।

৬০. যিকিরের দ্বারা কঠিন কাজ সহজ হয় এবং বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সুতরাং আল্লাহর যিকির এমন এক নেয়ামত, যা সকল মুশকিলকে আসান করে দেয়।

৬১. যিকিরের কারণে ভয়ভীতি দূর হয় এবং প্রশান্তি লাভ হয়। এমনকি ভয়ভীতির অবস্থাগুলোও যাকিরের জন্য প্রশান্তি ও নিরাপত্তার বিষয়ে পরিণত হয়।

পক্ষান্তরে যে যিকির থেকে গাফিল থাকে সে সর্বদা ভীতিগ্রস্ত থাকে। এমনকি শান্তি ও নিরাপত্তার উপায় ও উপকরণও তার জন্য ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

৬২. যিকিরের দ্বারা মানুষ এক বিশেষ শক্তি লাভ করে, যার দ্বারা অতি কঠিন কাজও তার জন্য সহজ হয়ে যায়।

৬২. আখিরাতের জন্য যারা কাজ করে তারা সবাই যেন প্রতিযোগিতায় লিপ্ত । আর তাদের মধ্যে যিকিরকারীই হল অগ্রগামী। তবে ময়দান যেহেতু ধুলার ঝড়ে আচ্ছন্ন তাই এখনই তা দৃষ্টিগোচর হচেছ না।

যেদিন এই ধুলার পর্দা সরে যাবে সেদিন সবাই পরিষ্কার দেখতে পাবে যে, যাকিরীনের জামাত সবার আগে লক্ষ্যে পৌঁছেছে।

৬৩. যিকিরকারী আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সত্যবাদিতার সনদ লাভ করে, কারণ যে আল্লাহর প্রশংসা করে এবং আল্লাহর গুণাবলি বর্ণনা করে সে তার কথায় সত্য এবং আল্লাহ তাকে সত্যবাদী বলেন।

আর আল্লাহ যাকে সত্যবাদী বলেন তার হাশর মিথ্যাবাদীদের সাথে হতেই পারে না।

৬৪. যিকিরের দ্বারা জান্নাতে ঘর তৈরি হয়। বান্দা যখন যিকির করে ফেরেশতারা জান্নাতে তার জন্য ঘর তৈরি করেন আর যখন যিকির বন্ধ করে তখন ফেরেশতারাও তাদের কাজ বন্ধ রাখেন।

৬৫. যিকির হল জাহান্নাম ও আল্লাহর বান্দার মাঝে দেয়াল স্বরূপ। বদআমলের কারণে মানুষ যখন জাহান্নামের পথে চলতে থাকে তখন যিকির তার সামনে প্রাচীর হয়ে দাঁড়ায়। Allah

কাজেই যিকির যত বেশি হবে প্রাচীর তত মজবুত ও নিশ্ছিদ্র হবে।

৬৬. ফেরেশতারা যেমন তাওবাকারীর জন্য ইস্তিগফার করেন তেমনি যিকিরকারীর জন্যও আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করেন।

৬৭. যে ভূখন্ডে আল্লাহর যিকির করা হয় তা অন্যান্য ভূখন্ডের সাথে গর্ব করে থাকে।

৬৮. বেশি বেশি যিকির করা মোনাফেকী হতে নিরাপদ থাকার উপায়। কারণ মুনাফেকরা আল্লাহ তাআলাকে খুব অল্প স্মরণ করে।

৬৯. যিকিরের মাঝে এক বিশেষ স্বাদ রয়েছে, যা অন্য কোনো আমলে পাওয়া যায় না। এই স্বাদ ও লযযত ছাড়া অন্য কিছুই যদি যিকিরের দ্বারা পাওয়া না যেত তবুও তা তার জন্য যথেষ্ট হত।

এই কারণে যিকিরের মজলিসকে জান্নাতের বাগান বলা হয়।

৭০. যিকির চেহারায় সজিবতা দান করে। আর আখেরাতে নূর ও আলো দান করবে। এ কারণে দুনিয়াতে আল্লাহর যিকিরকারীর চেহারা থাকে সবচেয়ে সজীব আর আখিরাতে তা হবে সবচেয়ে নূরানী ও আলেকিত।

৭১. যে ব্যক্তি ঘরে-বাইরে সব জায়গায় বেশি বেশি যিকির করে কিয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্যদানকারী হবে অনেক বেশি। কারণ এসকল ভূখন্ড, বৃক্ষলতা, ঘরবাড়ি, সব তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে।

৭২. যবান যতক্ষণ যিকিরে মশগুল থাকবে ততক্ষণ মিথ্যা, গীবত, বেহুদা কথাবার্তা থেকে নিরাপদ থাকবে। কারণ যবান তো চুপ থাকে না, হয় আল্লাহর যিকিরে মশগুল থাকবে,

নতুবা বেহুদা কথাবার্তায় লিপ্ত থাকবে। দিলের অবস্থাও অনুরূপ। দিল যদি আল্লাহর মহববতে মশগুল না হয় তাহলে মাখলুকের মহববতে মশগুল হবে।

৭৩. শয়তান মানুষের প্রকাশ্য দুশমন। সব সময় তাকে আতঙ্কিত করে রাখে এবং চতুর্দিক থেকে তাকে ঘেরাও করে রাখে। এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হল আল্লাহর যিকির। যে যত যিকির করবে সে তত বেশি শয়তানের হামলা থেকে নিরাপদ থাকবে।

এই জাতীয় অনেক ফায়দা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. তার কিতাবে বিভিন্ন পরিচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন।


যিকির এবং দুআ বিষয়ক আরও কিছু হাদিসঃ

وَعَنْ أَبِي هُرَيرَةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : «كَلِمَتَانِ خَفِيفَتَانِ عَلَى اللِّسَانِ، ثَقِيلَتَانِ فِي المِيزَانِ، حَبِيبَتَانِ إِلَى الرَّحْمَانِ: سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، سُبْحَانَ اللهِ العظيمِ» . متفقٌ عَلَيْهِ

আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

‘দু’টি কালিমা (বাক্য) রয়েছে, যা দয়াময় আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়, জবানে (উচ্চারণে) খুবই সহজ, আমলের পাল্লায় অত্যন্ত ভারী। তা হচ্ছে, ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযীম।

’ অর্থাৎ আমরা আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, মহান আল্লাহ অতীব পবিত্র।’ -মুত্তাফাকুন আলাইহি, সহীহুল বুখারী ৬৪০৬, ৬৬৮২, ৭৫৬৩, মুসলিম ২৬৯৪, তিরমিযী ৩৪৬৭, ইবনু মাজাহ ৩৮০৬, আহমাদ ৭১২৭

وَعَنْه رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «لأَنْ أَقُولَ: سُبْحَانَ اللهِ، وَالحَمْدُ للهِ، وَلاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ، وَاللهُ أكْبَرُ، أَحَبُّ إلَيَّ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ» . رواه مسلم

উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আমার এই বাক্যমালা (সুবহানাল্লাহি অলহামদুলিল্লাহি অলা ইলাহা ইল্লাল্লাহু অল্লাহু আকবার। Allah

(অর্থাৎ আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আল্লাহর যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ ছাড়া (সত্যিকার) কোনো ইলাহ নেই এবং আল্লাহ সব চাইতে মহান) পাঠ করা সেই সমস্ত বস্তু অপেক্ষা অধিক প্রিয়, যার উপর সূর্যোদয় হয়।”

-সহীহুল বুখারী ৬৪০৬, ৬৬৮২, ৭৫৬৩, মুসলিম ২৬৯৪, তিরমিযী ৩৪৬৭, ইবনু মাজাহ ৩৮০৬, আহমাদ ৭১২৭

وَعَنْه: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ: «مَنْ قَالَ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَريكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ ؛ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، فِي يَوْمٍ مِئَةَ مَرَّةٍ كَانَتْ لَهُ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ وكُتِبَتْ لَهُ مِئَةُ حَسَنَةٍ، وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِئَةُ سَيِّئَةٍ، وَكَانَتْ لَهُ حِرْزاً مِنَ الشَّيْطَانِ يَوْمَهُ ذَلِكَ حَتَّى يُمْسِي، وَلَمْ يَأتِ أَحَدٌ بِأَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِهِ إِلاَّ رَجُلٌ عَمِلَ أَكْثَرَ مِنْهُ» . وَقَالَ: «مَنْ قَالَ سُبْحَانَ الله وَبِحَمْدِهِ، فِي يَوْمٍ مِئَةَ مَرَّةٍ، حُطَّتْ خَطَايَاهُ، وَإنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ البَحْرِ» . متفقٌ عَلَيْهِ

উক্ত রাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হু অহদাহু লা শারীকা লাহ, লাহুল মুলকু অলাহুল হামদু অহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর।’

অর্থাৎ এক অদ্বিতীয় আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো সত্য উপাস্য নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। (বিশাল) রাজ্যের তিনিই সার্বভৌম অধিপতি। তাঁরই যাবতীয় স্তুতিমালা এবং সমস্ত বস্তুর উপর তিনি ক্ষমতাবান।

যে ব্যক্তি এই দো‘আটি দিনে একশবার পড়বে, তার দশটি গোলাম আজাদ করার সমান নেকী অর্জিত হবে, একশ’টি নেকী লিপিবদ্ধ করা হবে,

তার একশ’টি গুনাহ মোচন করা হবে, উক্ত দিনের সন্ধ্যা অবধি তা তার জন্য শয়তান থেকে বাঁচার রক্ষামন্ত্র হবে এবং তার চেয়ে সেদিন কেউ উত্তম কাজ করতে পারবে না। কিন্তু যদি কেউ তার চেয়ে বেশী আমল করে তবে।” Allah

তিনি আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি দিনে একশবার ‘সুবহানাল্লাহি অবিহামদিহ’ পড়বে তার গুনাহসমূহ মোচন করা হবে; যদিও তা সমুদ্রের ফেনা বরাবর হয়।”

-মুত্তাফাকুন আলাইহি, সহীহুল বুখারী ৩২৯৩, ৬৪০৫, তিরমিযী ৩৪৬৬, ৩৪৬৮, ৩৪৬৯, আবূ দাউদ ৫০৯১, ইবনু মাজাহ ৩৭৯৮, ৩৮১২, আহমাদ ৭৯৪৮, ৮৫০২, ৮৬১৬, ৮৬৫৬, ৯৮৯৭, ১০৩০৫, মুওয়াত্তা মালিক ৪৮৬, ৪৮৭

One comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *