মিলাদুন্নবী পালনের বিধান | ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল

ইসলামে মিলাদুন্নবী উদযাপনের বিধান এবং ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল সুনির্দিষ্ট। সেই দলিলের বাইরে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের সুযোগ নেই।

আপনি যদি ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের বিধান এবং মিলাদুন্নবীর দলিল সম্পর্কে না জানেন, তাহলে এই পোস্টটি আপনার জন্য। কারণ, এই পোস্টে মিলাদুন্নবী উদযাপনের বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্মদিনে পালিত হয় ঈদে মিলাদুন্নবী। কিন্তু ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের ব্যাপারে ইসলামে সুনির্দিষ্ট দলিল ও বিধান রয়েছে। সেই নিয়মের বাইরে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করা হবে ইসলামী বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক।

তাই পরিপূর্ণ মুমিন হতে হলে সকল মুসলমানকে মিলাদুন্নবী পালনের নিয়ম মেনে চলতে হবে। পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়লে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের বিধান ও মিলাদুন্নবীর দলীল সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে জানতে পারবেন।

মিলাদুন্নবী পালনের বিধান

আরও পড়ুন…………………….

ঈদে মিলাদুন্নবী কি জায়েজ

Eid-e-Milad un-Nabi

ঈদে মিলাদুন্নবীর ইতিহাস – মিলাদুন্নবী কখন শুরু হয়?

12 রবিউল আউয়াল 2023 কবে পালিত হবে

মাহে রবিউল আউয়ালের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য | কত তারিখ

স্ট্যাটাস | 12 রবিউল আউয়াল 2023 | + কবিতা

ঈদে মিলাদুন্নবী কখন উদযাপিত হয়?

সমগ্র বিশ্বের জন্য মানব মুক্তির দূত হিসেবে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ১২ই রবিউল আউয়াল এ পৃথিবীতে আগমন করেন। বিশ্বে তার আগমনের এই ঐতিহাসিক দিনটি বিশ্বে ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালিত হয়।

বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন ইসলামী অনুষ্ঠানের আয়োজনের মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত হয়। যদিও নবী ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে মিলাদুন্নবী পালিত হয়নি। কিন্তু হিজরি চতুর্থ সনের মাঝামাঝি থেকে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের রেওয়াজ হয়ে যায়। সময়ের সাথে সাথে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের রেওয়াজ এখন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে।

কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন কতটা যৌক্তিক? সে বিষয়গুলো পরিষ্কার করার জন্য আজকের পোস্টে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের বিধান ও মিলাদুন্নবীর দলিল পেশ করব। তাই মনোযোগ দিয়ে পোস্ট পড়তে থাকুন।

ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল

ইসলামের প্রতিটি হুকুম, নিষেধ ও বিধি-বিধান যথাযথ দলিল অনুযায়ী অনুসরণ করতে হবে। ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের ব্যাপারে আমাদের আলেম সমাজে বিভিন্ন মত লক্ষ্য করা যায়। অনেকে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনকে বিদআত মনে করেন। পোস্টের এই অংশে ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল জানার চেষ্টা করা যাক, কিভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন করতে হয়।


দলীল নং 1

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে নবীর আগমন সম্পর্কে বলেছেন, “হে প্রিয় রাসুল! সেদিনের ঘটনাটি স্মরণ করুন যেদিন আমি আম্বিয়াবাসীর কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, যখন আমি তোমাদেরকে দেব।

কিতাব ও হিকমত অর্থাৎ নবুয়ত, তারপর তোমাদের কাছে একজন মহান রাসুল আসবেন, যিনি আসবেন এবং তোমাদের প্রত্যেকের নবুওয়াতের সত্যায়ন করবেন, তখন তোমরা অবশ্যই তাঁর প্রতি ঈমান আনবে এবং তাঁকে সর্বোত্তম সাহায্য করবে। তোমরা কি এই অঙ্গীকার করবে এবং থাকবে? এই অঙ্গীকারে অটল? সকল নবী এক কণ্ঠে উত্তর দিলেন। দিলেন- হ্যাঁ, আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।

আল্লাহতায়ালা তখন বললেন- তোমরা একে অপরের সাক্ষী থাক এবং আমি তোমাদের সাথে সাক্ষী। (সূরা আলে ইমরান আয়াত 81 থেকে 82) এর মাধ্যমে। আয়াতে, নবী বলেছেন যে মানুষের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলেন আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং অন্যান্য।তিনি পৃথিবীতে তাঁর (রাসূল) আগমনের আগে নবীদের জানিয়েছিলেন।


দলীল নং 2

আবু কাতবাদাহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত আছে যে, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সোমবারের গুরুত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তর দেন, এই দিনে আমি জন্মগ্রহণ করেছি। আমার প্রতি পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।”

(মুসলিম-হাদিস নং 2640) তাই, এই দিনের গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য, নবী (সা.) সোমবার রোজা রাখতেন এবং অন্যদেরকে রোজা রাখতে উত্সাহিত করতেন।


দলিল নং ৩

হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত লাভের পর নিজের জন্মদিনে আকীকা করতেন। (বায়হাকী)


দলিল নং 4

একদিন হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) তার বাড়িতে কিছু লোকের সাথে আনন্দ করছিলেন, রাসূল (সা.)-এর জন্মের কথা পাঠ করছিলেন এবং তাঁর প্রশংসা নিয়ে আলোচনা করছিলেন, দরূদ শরীফ ও সালাম পাঠ করছিলেন।

এমন সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে উপস্থিত হয়ে এ অবস্থা দেখে বললেন, হে উপস্থিতি! তোমাদের সবার জন্য আমার সুপারিশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। (তানভীরে ফী মাওলেদী বশীরীন নাযীরে ইবনে দাহিয়া কৃত]।

যদিও এই উদ্ধৃতিটিকে অনেকে দুর্বল হাদিস বলে অভিহিত করেছেন। তারপরও এটি ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হবে। আশা করি ঈদে মিলাদুন্নবীর প্রধান প্রধান প্রমাণগুলো আপনারা জানেন।

মিলাদুন্নবী পালনের বিধান

ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল সম্পর্কে ইতিমধ্যে ধারণা পেয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের নীতি আমাদের শরিয়তের সাথে সাংঘর্ষিক। মিলাদুন্নবী পালনের বিধান সংক্রান্ত একটি কোরানের আয়াত হল, “বলুন, হে নবী! আপনি যদি সত্যিই আল্লাহকে ভালোবাসেন, তাহলে আমাকে অনুসরণ করুন, তাহলে আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসবেন এবং আপনার সমস্ত পাপ ও অপরাধ ক্ষমা করবেন।”

(সূরা আলে ইমরান, আয়াত-৩১) এই আয়াত থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, মহান আল্লাহ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। )

ইসলামের প্রতিটি ক্ষেত্রে। তাই নবীজি যেভাবে সোমবার রোজা রেখে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করতেন, আমরাও ঠিক সেভাবেই তাকে অনুসরণ করব এবং ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করব। তবেই আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি এবং আমাদের অতীতের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে পারি। তাই ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের নিয়ম জেনে গেছেন।

ঈদে মিলাদুন্নবী কিভাবে পালন করবেন

এতদিন এই পোস্টটি পড়ার পর, আপনি অবশ্যই পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে মিলাদুন্নবী পালনের বিধান এবং ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা পেয়েছেন। হাক্কানী আলেম ও ইসলামী বিধি-বিধান অনুযায়ী ঈদে মিলাদুন্নবী কিভাবে পালন করা শরীয়াহ সম্মত, এখন জেনে নিন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো।

  1. ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে কোনো ধরনের আলোকসজ্জা, মিছিল, গান বাজনার আয়োজন করা যাবে না। বরং সীমিত ইসলামী আচার অনুষ্ঠান যেমন: হামদ নাত, গজল, আজান, প্রবন্ধ, বক্তৃতা ইত্যাদি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। ঈদে মিলাদুন্নবীর গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে সেমিনার ও আলোচনা সভার আয়োজন করা যেতে পারে। সেখানে শুধু নবীজির জীবনী আলোচিত হয়েছে তা নিশ্চিত করতে হবে।


2. ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে এতিম, এতিম, অসহায়দের খাদ্য দান করার মতো মহৎ কাজ করা যেতে পারে।


3. ঈদে মিলাদুন্নবীরের এমন সব অনুষ্ঠান পরিহার করুন যা আমাদের শরিয়তের সাথে সাংঘর্ষিক।


4. বিদায় হজের ভাষণে নবী (সা.) বলেছেন, “হে আমার অনুসারীরা! যতক্ষণ তোমরা আমার জীবন দর্শন ও মহাগ্রন্থ আল-কুরআনকে আঁকড়ে থাকবে, ততক্ষণ কেউ তোমাদের বিপথগামী করতে পারবে না। ”

তাঁর বিদায় হজের এই ভাষণ মানবজাতির জন্য এতই প্রযোজ্য ও কার্যকর যে, তাঁর শেষ কথা অনুযায়ী আমল করলে দুনিয়া ও আখিরাতে আমরা সফলকাম হব। তাই আমরা তার দেখানো পদ্ধতিতে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করব।


5. ব্যক্তিগতভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের সর্বোত্তম উপায় হল সোমবার রোজা রাখা এবং বেশি বেশি নফল নামাজ আদায় করা। পোস্টের আগের অংশ থেকে, আপনি ঈদে মিলাদুন্নবীর দলিল এবং মিলাদুন্নবী পালনের বিধানগুলি পুনরায় দেখতে পারেন5

পরিশেষে কিছু কথা

প্রিয় ধর্মপ্রাণ ভাই ও বোনেরা, আপনি যদি এই সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন, তাহলে আপনি অবশ্যই ঈদের মিলাদুন্নবীর দলিল সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন এবং মিলাদুন্নবী পালনের বিধানও পুরোপুরি বুঝতে পারবেন।

মিলাদুন্নবী উদযাপনের নিয়ম জানতে চাইলে পোস্টটি শেয়ার করুন। সর্বোপরি, আপনি এই পোস্টটি পড়ে কতটা উপকৃত হয়েছেন তা বলতে পারেন। এছাড়াও আরো আপডেট ইসলামিক পোস্ট পেতে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।

ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা কি জায়েজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *